বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি একটি বড় সংকট৷ এখানে গঠনমূলক আলোচনা কিংবা সমালোচনার৷ পপরিবেশ নেই বললেই চলে। আর একারণেই আর্থ-সামাজিক ভাবে আমাদের যতটা এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন আমরা ঠিক ততখানি এগিয়ে যেতে পারছি না। আমাদের উচিৎ এই পরিবেশ দূর করা সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কেননা সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করা যদি করা হয় তাহলে আমরা দেখব, প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থা এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক তৈরি অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই দলের মূল ভূমিকা থাকলেও প্রতিহিংসার রাজনীতি দূর করতে হলে সকল দলেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
যেকোন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত এবং শৃংখলা বজায় রাখতে হলে মামলা ও বিচারের বিষয়টি আইনের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত৷ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয় তাহলে প্রকৃত অপরাধী ও দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পাবে৷ কিন্ত যদি রাজনৈতিক কারণে মামলা দায়ের ও তা প্রত্যাহার করা হয় তাহলে তার সুযোগ নেয় প্রকৃত দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীরা৷ তারা এই সুযোগে ছাড়া পেয়ে যায়৷ আর আমাদের দেশে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করার সংস্কৃতি বহুদিন ধরে চলে আসছে।
ক্ষমতাসীন দল বরাবরই এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেকৃত মামলাগুলোকে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়েছে বলে তুলে ধরছে। যদিও সরকার বলছে, মামলা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কিন্ত বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন, মহাসচিব বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও শাস্তির ঘটনা গণতন্ত্র চর্চার পক্ষে যায় না। এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতে ন্যূনতম শিষ্ঠাচার মানা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ কথায় এদের প্রতিপক্ষ বা ভিন্নমত পোষনকারীদের সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী বলে গালি দিয়ে। সরকারের এই ধরনের কার্যক্রম যদি ভবিষ্যতে অনুসরণ করা হয় তাহলে আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অস্তিত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলেগুলোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ গ্রহণের পথ সুগম করে দেয়। আর এই বিষয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ক্ষমতালোভী দলগুলো মোটেই উদ্বিগ্ন তো নয় বরং তারা নিজেদের সৃষ্ট জাতীয় সঙ্কট নিরসনকল্পে বিদেশীদের দুয়ারে ধরনা দেয়া তাদের স্বভাবে পরিণত করেছে। দেশ পরিচালনায় নিজেদের যোগ্যতার বিদেশী সার্টিফিকেট আদায়ের জন্য ক্ষমতাসীন দল হন্যে হয়ে ছুটে। নিজেদের যোগ্যতার প্রতি দেশের জনগণের মূল্যায়নের অপেক্ষা ও তোয়াক্কা তারা করে না। শাসক দল নানাবিধ কৌশল ও কায়দা-কানুন করে দেশের জনগণকে দেশের শাসক নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তাই তাদের ক্ষমতার লড়াই থেকে জনগণ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে।
আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা ও গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মানের অঙ্গীকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকার জন্য করা হয়। এরপ্র ক্ষমতায় বসেই আমাদের সরকারগুলো অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে এতো অভ্যস্থ হয়ে পড়ে কিংবা প্রশাসন যন্ত্রকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক লেবাসে অগণতান্ত্রিক নব্য স্বৈরাচারী কায়দায় চালানোর প্রাক্টিসে এতবেশী অভ্যস্থ করে তোলে যে, রাষ্ট্র ও সরকার হয়ে পড়ে গণ দূশমনে, জনগণ ক্রমাগত ভয়ে উৎকণ্ঠিত হতে থাকে,সকারের নানাবিধ এজেন্সী ও প্রতিষ্টানের ও সরকারী দলের তান্ডবের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে, ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে মুক্তির পথ খুজে ফিরে। রাজনীতিবীদরা যদি জনগনের কথা ভাবত তাহলে দেশে আর কোন সমস্যা থাকত না কিন্ত তারা রাজনৈতিক ময়দানে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় যেকোন মূল্যে আর নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে তারা সাধারণ জনগনের জীবন বিপন্ন করতে একবিন্দুও দ্বিধাবোধ করে না। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসায় তারা যেকোন কাজ করতে পারে।